প্রথম পাতা

শহরের তথ্য

বিনোদন

খবর

আইন/প্রশাসন

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

শিল্প/সাহিত্য

সমাজ/সংস্কৃতি

স্বাস্থ্য

নারী

পরিবেশ

অবসর

 

বিজ্ঞান/প্রযুক্তি

অক্টোবর ৩০, ২০১৬

 

ফিউশন এনার্জী- কি ভবিষ্যৎ ?

শঙ্কর সেন


ফিউশন এনার্জী বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই মনে হবে পারমাণবিক ফিশন-এর কথা যার সঙ্গে আমাদের পরিচয় অনেকদিনের। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরবর্তী কালে পৃথিবীতে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে পারমাণবিক ফিশন-বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে এবং এখনও স্থাপিত হচ্ছে।

পারমাণবিক ফিশন হল কণাকে বিভক্ত করার বিষয় যার কথা আমরা জানতে পারি পদার্থবিজ্ঞানী রাদারফোর্ডের গবেষণা থেকে। উদাহরণ স্বরূপ ইউরেনিয়াম-২৩৫ -কে বিভক্ত করা হয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণুতে। এর ফলে বিশাল এনার্জী নির্গত হয় বটে, তবে এই প্রক্রিয়ায় আছে অনেক প্রতিবন্ধক। ইউরেনিয়াম হল একটি দুষ্প্রাপ্য ধাতু যার সংস্থান অতীব সসীম। তাছাড়া, এগুলি দ্বারা উৎপাদিত হয় প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত বর্জ্য যা শত শত বৎসর ধরে থাকে বিপজ্জনক তেজস্ক্রিয়। ফলে, পারমাণবিক কেন্দ্রগুলি ঝুঁকি-বিশিষ্ট ও বিপজ্জনক যেমন, থ্রি-মাইল আইল্যাণ্ড, চেরনোবিল, ফুকুশিমা।

পারমাণবিক ফিউশন হল পারমাণবিক ফিশনের বিপরীত ; এখানে অণু-কে বিভক্ত করার পরিবর্তে ক্ষুদ্র অণুদের সংযুক্তি করা হয়- পরিণত হয় বড় বড় অণু।

এর পিছনে বিজ্ঞানটা কি ?

অণুরা পরস্পর সংযোগে থাকে প্রকৃতির চারটি মূল বলের দুটি দ্বারা- দুর্বল ও সবল পারমাণবিক বন্ধন। এই বন্ধন-শক্তিই এনে দেয় স্থায়িত্ব (stability)। লোহার পরমাণু-কেন্দ্রিক কণা হল সব থেকে স্থায়ী। লোহা ও নিকেল-এর থেকে ভারী অণুর পারমাণবিক বিভাজনের ( ফিশন ) থেকে উদ্‌গত হয় যে পারমাণবিক শক্তি তার থেকে সহজেই উৎপাদিত হয় বিদ্যুৎ- যা হচ্ছে বর্তমানে পৃথিবীর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। আবার লোহা ও নিকেল-এর থেকে হালকা অণুদের পারমাণবিক সংযুক্তির ( ফিউশন ) মধ্য দিয়ে উদ্‌গত হয় বিশাল শক্তি।

কোথা থেকে আসে এই শক্তি ? সংযুক্তির সময়ে কণাগুলির ভরের একাংশ রূপান্তরিত হয় এনার্জীতে ( আইন্‌স্টাইনের বিখ্যাত সূত্র E = mC*2 অনুযায়ী )।

ফিউশনের সব থেকে সাধারণ রূপ হল D-T ফিউশন ( যা নক্ষত্রে হয় ), যা দুটি হাইড্রোজেন-আইসোটোপ- ডিউটেরিয়াম- এবং ট্রিশিয়াম-কে নিয়ে। ডিউটেরিয়াম ও ট্রিশিয়াম-এর আছে যথাক্রমে ২ ও ৩ -টি নিউট্রন (নিষ্ক্রিয় কণা ) যা হাইড্রোজেন-এর একটি মাত্র প্রোটোন-এর থেকে বেশি। ফলে, ফিউশন প্রক্রিয়া সহজেই ঘটানো যেতে পারে যেহেতু দুটি প্রোটোনের মধ্যের চার্জকে অতিক্রম করতে হবে। যেহেতু প্রোটোনের আছে হাঁ-ধর্মী চার্জ ও নিউট্রন নিষ্ক্রিয়, নিউট্রন ও প্রোটোনদের সংযুক্ত করতে হলে সম-চার্জ কণাদের প্রাকৃতিক প্রতিরোধক শক্তিকে দমন করতে হবে। দমন করতে হলে আরও চাই D-T ফিউশনের জন্য তাপমাত্রা- ৪৫ মিলিয়ন কেলভিন ( সেলসিয়াসে সামান্য কম )। [ তুলনায়, সূর্যের কোর-তাপমান হল ১৫ মিলিয়ন সেলসিয়াস )।

এই তাপমানে পৌঁছলে ফিউশনকে এক লম্বা সময়ের জন্য ধারণ করে রাখতে হবে প্লাজ্‌মা উৎপাদনের  জন্য। ধারণ হলেই এনার্জী উদ্‌গত হয়, সঙ্গে উৎপন্ন হয় (ক) হিলিয়াম, যা একটি noble গ্যাস, সবরকমের বিক্রিয়াতে নিষ্ক্রিয়, (খ) 'অতিরিক্ত নিউট্রন' যা হাইড্রোজেনকে আরও বিক্রিয়ায় 'সাহায্য' করবে [ চিত্র ১ ]।


চিত্র ১ : ডিউটেরিয়াম ⤒ ট্রিশিয়াম ফিউশন।

বর্তমানে প্রাথমিক ফিউশন-তাপমাত্রায় যাওয়া বা প্লাজ্‌মা-কে সুস্থিত ভাবে ধারণ করার কোনও উপায় পাওয়া যায়নি, তবে চেষ্টা চলছে।

ফিউশন-কে মনে হতে পারে বিজ্ঞানধর্মী কল্প-কথা ; কিন্তু প্রতিদিন সারাদিন ধরে ঘটে চলেছে আমাদের সূর্যের ভিতর যার ফলে সূর্য আলো দেয়। সূর্য হল এক সুবিশাল ফিউশন  চুল্লী, প্রতি ক্ষণেই হাইড্রোজেন অণুদের সংযুক্ত করে তৈরী হয় গুরু মৌলিক পদার্থতে, যার বাই-প্রোডাক্ট হিসাবে আমরা পাই অবিরাম সূর্যালোক।

শক্তির উৎস হিসাবে ফিউশন আদর্শ। এর জ্বালানি বিষাক্ত নয়, নয় এটি জীবাশ্ম-সম্ভূত। পারমাণবিক ফিশনের তুলনায় এতে তিন থেকে চারগুণ শক্তি উৎপাদিত হতে পারে। ফিউশন নিঃসৃত হয় সাধারণ মৌলিক পদার্থ দ্বারা যা বিশ্বসংসারে রয়েছে প্রচুর ; ঘটনাচক্রে যদি কোনও বিপর্যয় হয়, ফিউশন-চুল্লী গলে যায়না, শুধু হয়ে যায় বন্ধ। কোনও পারমাণবিক-বর্জ্য উৎপাদিত হয় না এতে, হয় না কোনও দূষণ।

ফিউশন হল একটি প্রক্রিয়া যা সূর্য ও নক্ষত্রদের শক্তি যোগায়। এই শক্তি হল পৃথিবীর জীবনীশক্তি। একে ফিউশন বলা হয় কারণ এই এনার্জী উদ্ভূত হয় হালকা অণুদের সংযুক্তির ফলে।

Daniel Clery-র বিখ্যাত লেখা "A Piece of the Sun"-এ আছে- একটি ১-গিগাওয়াট কয়লা-বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রোজ প্রয়োজন হয় ১০,০০০ মেট্রিক টন কয়লা, যা বহন করে নিয়ে আসে ১০০ রেল ওয়াগন। তুলনায়, একটা ল্যাপটপ ব্যাটারি থেকে নেওয়া লিথিয়াম এবং ৪৫ লিটার জল থেকে পাওয়া ডিউটেরিয়াম যথেষ্ট হবে ফিউশন ব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদনে, যা কিনা যুক্তরাজ্যের একটি সাধারণ কন্‌জুমারকে বিদ্যুৎ জোগাবে ৩০ বছর ধরে। তবে অণুদের সংযুক্তি করা দুরূহ কারণ অণুদের স্নায়ুকেন্দ্রে আছে প্রোটন ( সাধারণতঃ, নিউট্রন ) যাদের চার্জ হল সবাই ধনাত্মক ; আর যেহেতু একই ধরণের চার্জ পরস্পরকে প্রতিক্ষেপ করে, দুই বা ততোধিক অণুর সংযুক্তিতে প্রয়োজন হয় বল। এর জন্য প্রয়োজন এমন পর্যায়ের তাপ য দ্রুত ধাবমান অণুদের থেকে ইলেক্‌ট্রনদের বিচ্যুত করে। ফলস্বরূপ, আমরা পাই 'প্লাজমা' ( অর্থাৎ ইলেক্‌ট্রনবিহীন স্নায়ুকেন্দ্র )। উত্তপ্ত প্লাজমাকে যদি থেঁত্‌লানো যায় সজোরে, তাহলে কিছু স্নায়ুকেন্দ্র পরস্পরকে ধাক্কা মেরে সংযুক্ত হয়।

প্রয়োজনীয় তাপ ও চাপ হল চরম। মূলতঃ আমরা সূর্যের অন্ত্যস্থলের অবস্থার প্রতিলিপি বানাতে চাইছি যেখানে, সূর্যের সুবিশাল ভর- পৃথিবীর ৩৩০,০০০ গুণ, তৈরী করে গুরুতর চাপ এবং যেখানে তাপমাত্রা হল ১৭ মিলিয়ন ডিগ্রী সেলসিয়াস। বস্তুতঃ, তুলনায় মোট জ্বালানি অনেক কম হওয়াতে পৃথিবীতে ফিউশন শুরু হয় ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।

এটা হল প্রথম সমস্যা। দ্বিতীয় সমস্যা হল- আমাদের জ্বালনি হল প্লাজ্‌মা, যা অমানুষিক(weird )। এটি তরল নয়, কঠিন নয়, গ্যাসও নয়- এটি পদার্থের চতুর্থ অবস্থা। যখন এই ধরণের তাপ- ও চাপ-এর পীড়নে প্লাজ্‌মাকে পড়তে হয়, এটি উৎকটভাবে অচঞ্চল হয়ে ওঠে। একে আবদ্ধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়।

আমরা নিশ্চয়ই বিঘ্নতা উপলব্ধি করতে পাচ্ছি- আমরা পৃথিবী-বক্ষে একটি ক্ষুদ্র নক্ষত্রের জন্ম দিতে চাইছি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে মানুষকে উদ্‌ঘাটিত করতে হয়েছে মনুষ্য ইতিহাসে প্রথম এক অত্যন্ত জটিল প্রযুক্তি।

ফিউশন এনার্জী-গবেষণার জন্য San Francisco-র বাইরে Lawrence Livermore National Laboratory-তে আছে the National Ignition Facility (NIF)। তিনটি ফুটবল ক্ষেত্রের সমান ক্ষেত্রের উপর দাঁড়িয়ে আছে NIF-এর ১০-তলা বাড়ী, যেখানে রয়েছে পৃথিবীর এক অত্যন্ত শক্তিশালী লেজার ব্যবস্থা : ১৯২-টি  ultraviolet light-এর রশ্মি যা ৫০০-ট্রিলিয়ন ওয়াট শক্তি প্রদান করতে সমর্থ। মনে রাখতে হবে, এটি সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মুহূর্তে যত শক্তি ব্যবহার করছে তার ১,০০০-গুণ। সমস্ত শক্তি কিন্তু উৎপাদিত হচ্ছে একটিমাত্র শট -এ, এক সেকেণ্ডের এক-বিলিয়ন অংশে অধিকরণে সন্নিপাতিত করা হাইড্রোজেন-পরিপূর্ণ একটি ক্ষুদ্র স্বর্ণ সিলিণ্ডারে। সিলিণ্ডারটি যুগপৎ বাহিরে ও ভিতরে বিদীর্ণ হয় এবং ভিতরের হাইড্রোজেন গলে যায়। এই কৃৎকৌশলকে বলা হয় inertial confinement ফিউশন।

(ক) Tokamak : চুম্বকীয় সীমাবদ্ধ ফিউশন উদ্ভাবনা

ফিউশন সৃষ্টি করার সাধারণ উপায় হল প্লাজ্‌মা-কে চুম্বকীয়-ব্যবস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা। প্লাজ্‌মা তড়িৎচুম্বকের কাছে এতটাই সংবেদনশীল যে, প্লাজ্‌মাকে তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্র ব্যবহার করে ধারণ এবং সঙ্কোচন করা যাবে তাকে বাহ্যিক স্পর্শ না করে। Tokamak ব্যবহার করে এই কার্য সম্পন্ন করা সম্ভব। [Tokamak হল একটি রুশীয় শব্দ যা নির্মিত হয়েছে অন্যান্য শব্দের প্রথম বর্ণ নিয়ে ]। Tokamak হল একটি বিশাল ফাঁপা ধাতুর doughnut যা শক্তিশালী তড়িৎচুম্বকীয় coil দ্বারা আবৃত। এই coil দ্বরা চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরী করা যাবে যার দ্বারা doughnut-এর ভিতরে প্লাজ্‌মাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে [ চিত্র ২ ]।


চিত্র ২ : Tokamak

Tokamak-ধারণা প্রথম উদ্‌ঘাটিত হয় সোভিয়েট ইউনিয়নে ১৯৫০-সালের দশকে ; তখন থেকেই এটি আধিপত্য করে আসছে ফিউশন-গবেষণায়। ১৯৮০-সালের দশকে বিশাল বিশাল Tokamak নির্মিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটনে, জাপানে ও ইংল্যাণ্ডে, কয়েক শত মিলিয়ন ডলার খরচে। এদের উত্তরাধিকারী- আন্তর্জাতিক তাপকেন্দ্রিক পরীক্ষামূলক  চুল্লী(International Thermonuclear Experimental Reactor- ITER নির্মিত হচ্ছে ফ্রান্সে-Marseilles-এর বাইরে- একটি ছোট শহরে।  চুল্লীটি ৩০ মিটার লম্বা এবং ওজনে ২৩-হাজার টন, কর্মীসংখ্যা কয়েক হাজার। এটিতে প্লাজ্‌মা ধারণ করবে ৮৪০ ঘন মিটার এবং এর তড়িৎচুম্বকগুলির জন্য প্রয়োজন হচ্ছে ১০০,০০০ কিলোমিটার niobium-tin তার। গবেষণার সুবিশাল খরচ দেবে একটি কনসর্টিয়াম যাতে আছে মাঃ.যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতবর্ষ।

সুবিশাল সাইজ, জটিলতা এবং নানা রাজনৈতিক সমস্যা যথা মূলধন-সংগ্রহ, ফিউশন প্রোজেক্টকে বারবার ফেলে দিচ্ছে ডেডলাইন নারক্ষার এবং ফলস্বরূপ মূল্য-বৃদ্ধির ফাঁদে। NIF সাত বৎসর পিছোল, বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে হল প্রায় দ্বিগুণ। হিসাবমত ITER-এর পুরোশক্তি-চালনার আনুমানিক তারিখ ছিল ২০১৬-সালে, এখন পিছিয়ে হয়েছে ২০২৭ -তবে এই তারিখ নিয়ে সংশয় আছে। এর খরচা বেড়েছে ৫- থেকে ২০-বিলিয়ন ডলার ( তুলনায় সুবৃহৎ Hadron Collider-এর মূল্য হল ৪.৭৫ বিলিয়ন ডলার )। এখানে দিশা হল যন্ত্রগুলিকে breakeven-সীমার মধ্যে রাখা যেখানে  চুল্লী তৈরী করবে বেশি শক্তি তাকে চালাবার চেয়েও। দুঃখের বিষয় এই অবস্থায় এখনও আসেনি এবং এর ফলে অনেক বিজ্ঞানীই হতাশ হয়েছেন।

১৯৯০-দশকেই tokamak-এর আধিপত্য নিয়ে কিছু বিজ্ঞানীর সংশয় দেখা যায়। Tokamak-এ প্লাজ্‌মার কণাগুলি ভ্রমণ করে বদ্ধ পেঁচানো কক্ষপথে- বৈদ্যুতিক কারেণ্টের লাইনগুলি ঘিরে। তড়িৎচুম্বকীয় হাঙ্গামা দিয়ে এই কণাদের তাদের ছোট ছোট কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করা শক্ত, এবং এটি যখন হয় তখন প্লাজ্‌মা হয়ে যায় অস্থির এবং মহার্ঘ তাপ হারায়। এই অস্থিরতা কাটাতে প্রয়োজন আরও বৃহৎ আকারের Tokamak ( যার অর্থ জটিলতা-বৃদ্ধি ), প্রয়োজন আরও শক্তির এবং আরও অর্থ ব্যয়। বিজ্ঞানীরা অন্য পথের খোঁজ করছেন।

( খ ) :proton⤒boron-11 ফিউশন বিক্রিয়া

একটি বিকল্প প্রস্তাব দিল Tri Alpha- ডিউটেরিয়াম- হিলিয়াম এর বিকল্প proton⤒boron-11 ফিউশন বিক্রিয়া।

১৯৯৮-সালে ক্যালিফর্নিয়ায় প্রতিষ্ঠিত Tri Alpha Energy Inc. একটি প্রাইভেট মার্কিন কোম্পানি, নিউট্রন-হীন ফিউশন শক্তি বিকাশের লক্ষ্যে। প্রতিষ্ঠানটি যেহেতু গোপনীয়তা রক্ষা করে, তাদের গবেষণা বিষয়ে বিশেষ কিছু জানা যায়না। সামান্য কিছু জানা যায় প্রকাশিত গবেষণাপত্র থেকে।

প্রকাশ যে তাঁরা বিবেচনা করছেন [ গবেষণালব্ধ ফল ] একটি লম্বা  চুল্লীর দুই প্রান্ত থেকে অধিক বেগে compact toroid-এর ত্বরণ, এবং  চুল্লীর মাঝামাঝি FRC (Field-reversed configuration)-তে অন্তর্ভুক্ত হওয়া।

ফিউশন বিক্রিয়ায় TAE জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করতে চায় হাইড্রোজেন ও বোরোন-এর মিশ্রণ, যা নিউট্রন-হীন, উৎপাদন করে তিনটি আলফা অণু। TAE-র মতানুসারে বোরোন-এর যোগান কার্যতঃ অসীম, শুধুমাত্র ঐহিক উৎপাদন হল আনুমানিক ১০০,০০০ বছরের।

হাইড্রোজেন-বোরোন বিক্রিয়ায় তাপমাত্রার প্রয়োজন প্রায় ৩ বিলিয়ন ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর জন্য TAE ব্যবহার করছে Linear field-reversed configuration (FRC) এবং প্রখর neutral beam injection যাতে উত্তমরূপে-আবদ্ধ প্লাজমা পাওয়া যায়। Tri Alpha Colliding Beam ফিউশন  চুল্লীতে (CBFR) নিউট্রন-হীন ফিউশন অনুসন্ধান করছে, Field-Reversed configuration-এ দুটি compact toroid-কে তড়িৎচুম্বকীয় ব্যবস্থায় উত্তপ্ত, ত্বরণ, সংঘর্ষ এবং অন্তর্ভুক্তির সাহায্যে [ চিত্র ৩ ]।


চিত্র ৩ : CBFR।

আগস্ট, ২০১৫-সালে TAE প্লাজমার পরিরক্ষিত নির্বাহ সপ্রমাণ করেছে-১১ মিলিসেকেণ্ডের জন্য। এর পরের ধাপ হল আরও শক্তিশালী beam দিয়ে প্লাজমাকে উত্তপ্ত করা- উচ্চ তাপমানে এর নির্বাহ বিচার করার জন্য।

উৎস :
Lev Grosman, Unlimited Energy for everyone, always:FUSION by TIME magazine
Tri Alpha Energy:Secretive Clean Fusion Power, www.ialtenergy.com/tri-alpha-energy.html

 


লেখক পরিচিতি - শিক্ষাবিদ। বি.ই. কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর। এক সময় পশ্চিম বঙ্গ সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রী ছিলেন। অবসর-এর যুক্ত প্রায় জন্মকাল থেকেই। অবসর-এর উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি।

 

(আপনার মন্তব্য জানানোর জন্যে ক্লিক করুন)

অবসর-এর লেখাগুলোর ওপর পাঠকদের মন্তব্য অবসর নেট ব্লগ-এ প্রকাশিত হয়।

Copyright © 2014 Abasar.net. All rights reserved.

 


অবসর-এ প্রকাশিত পুরনো লেখাগুলি 'হরফ' সংস্করণে পাওয়া যাবে।